Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
কুন্ডেরচর ইউনিয়নের পদ্মা চরে মানুষের বসবাস ও রবি শষ্য চাষ।
বিস্তারিত
সরিষার চাষ পদ্ধতি
কৃষি ও কৃষক ডেস্ক

সরিষা ব্রাসিকা  (Brassica) বা ক্রুসিফেরি (Cruciferae)  গোত্রের কয়েক প্রজাতির তেল প্রদায়ী দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। সরিষার দানা মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সরিষার দানা পানির সঙ্গে মিশিয়ে ভিনিগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়, দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়, যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়।

সরিষা একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর উৎপত্তি স্থল এশিয়া। ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন রবিশস্য হিসেবে সরিষার চাষ করা হয়। সরিষার গাছ দৈর্ঘ্যে ১ মিটারের মতো হয়, তবে রাই সরিষা ২ মিটারও উঁচু হতে পারে।

মাটি : এঁটেল দোআঁশ, বেলে দোআঁশ এবং দোআঁশ মাটিতে সফল ও অগ্রণী জাতের সরিষা চাষ করা যায়। জমিতে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

বীজ বপনের সময় : অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের মধ্যে বীজ বপন শেষ করতে হবে।

জমি তৈরি : জমিতে জো আসার পর মাটির প্রকারভেদে ৪-৬টি চাষ ও মই দিয়ে বীজ বপন করতে হবে। মাটিতে রসের অভাব হলে বীজ বপনের আগে হালকা সেচ দিতে হবে।

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি : ইউরিয়া ২৬৫-২৮০ কেজি, টিএসপি ১৭৫-১৮০ কেজি, মিউরেট অব পটাশ ৫০-৬৫ কেজি, জিপসাম ২৫০-২৯০ কেজি (প্রতিটি সার হেক্টর হিসাবে)। সরিষার জমিতে সালফার (জিপসাম) প্রয়োগ উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে।

সার প্রয়োগ ও সেচ : অর্ধেক পরিমাণ ইউরিয়া এবং সব টিএসপি, এমপি ও জিপসাম সার জমি তৈরির সময় মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর যখন গাছে দুই-চারটি করে ফুল আসা শুরু হয় তখন ছিটিয়ে দিতে হবে। ভোরে গাছের পাতায় কুয়াশা থাকে এবং সার গাছের পাতায় লেগে পাতা পুড়ে যেতে পারে, সেজন্য বিকালে সার ছিটাতে হবে।

বপন বীজ পদ্ধতি : বীজ ছিটিয়ে বা সারিতে বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে লাঙলের নালা কেটে গর্ত করে গর্তে বীজ ফেলে তা ভালোভাবে মাটিতে ঢেকে দিতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০-২৫ সেন্টিমিটার। সারিতে চারার দূরত্ব ৪-৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে। ছিটিয়ে বপন করলে ভালোভাবে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। গাছ বেশি ঘন হলে গজানোর ৭-১০ দিন পর চারা পাতলা করে দিতে হবে। চারা ভালোভাবে গজানোর জন্য ৩-৪ সেন্টিমিটার মাটির নিচে বীজ বোনা দরকার।

বীজের পরিমাণ : ছিটিয়ে বপন ৭.০-৮.০ কেজি/হেক্টর, সারিতে বপন ৪-৬ কেজি/হেক্টর।

নিড়ানি : জমিতে আগাছা দেখা দিলে বীজ গজানোর ২০-২৫ দিনের মধ্যে নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

পানি সেচ : চারা গজানোর ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে একটি সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর অঞ্চলে বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে একটি এবং তারও ২০-২৫ দিন পর আর একটি সেচের প্রয়োজন হয়।

রোগ দমন : বিনা সরিষার বীজ ব্যাভিস্টিন (২.৫ গ্রাম/কেজি) বা বেনলেট (১ক্স৫ গ্রাম/কেজি) দিয়ে শোধন করতে হবে। অল্টারনারিয়া রোগের আক্রমণ বেশি দেখা দিলে ডায়াথেন এম ৪৫ বা রোভরাল স্প্রে করতে হবে। ফুল ধরা শেষ হলে ১৫ দিন পর পর দু’বার স্প্রে করলেই হবে।

পোকা দমন : জাব পোকার আক্রমণ হলে সরিষার ফলন কমে যায়। ফুলের কুঁড়ি আসা শুরু হলে এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ডাইমেক্রন ১০০ ইসি বা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রভৃতি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। মৌমাছি সরিষা গাছের পরাগায়নে সাহায্য করে এবং এতে ফলন বৃদ্ধি পায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরিষা ফুলে অধিক সংখ্যক মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য বিচরণ করে। তাই বিকালে যখন মৌমাছি থাকে না তখন কীটনাশক ছিটাতে হবে।

ফসল সংগ্রহ ও মাড়াই : সরিষা গাছের ফল তথা সিলিকুয়া হলুদ রঙের হলে ফসল তুলতে হবে। মাটি নরম থাকলে সরাসরি গাছের গোড়া ধরে টেনে শিকড়সহ তোলা যায়। এ জাতটির বৈশিষ্ট্য হলো টেনে তুললেও বীজ ঝরে পড়ে না। অন্যথায় কাঁচি দিয়ে মাটির ঠিক উপরিভাগে গাছের গোড়া কেটে দিতে হবে। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করে ৪-৫ দিন রোদে শুকিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। সূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস